ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২
gonojog24
Bongosoft Ltd.

ওয়াসার পানিতে পোকা ও দুর্গন্ধ: দায় নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ


গণযোগ | দীপন নন্দী প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৫, ১০:৫০ পিএম আপডেট: জুলাই ১, ২০১৯ ১১:৩৯ এএম ওয়াসার পানিতে পোকা ও দুর্গন্ধ: দায় নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ
ছবি: সংগৃহীত

 

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে পাওয়া যাচ্ছে পোকা। তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত এই পানি ফুটিয়েও পানের উপযোগী করা যাচ্ছে না। গত কয়েক মাস ধরেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ওয়াসার গ্রাহকেরা এই সমস্যার ব্যাপারে অভিযোগ জানালেও সমাধান মিলছে না।


তবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের দাবি, গ্রাহকদের বাড়ির পানির ট্যাংক নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণেই এমনটা হচ্ছে।

শান্তিবাগের বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান গত দুই সপ্তাহ ধরে ওয়াসার পানিতে পোকা পাচ্ছেন। এর পাশাপাশি রয়েছে তীব্র দুর্গন্ধ। দেড় মাসের মধ্যে দুবার বাড়ির পানির ট্যাংক পরিষ্কার করেও কোনো সুফল পাননি তিনি।

একই ধরনের সমস্যার কথা জানিয়েছেন গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'লাইনে যখন পানি আসে, প্রথমে কিছুক্ষণ হলুদ রঙের পানি আসে। প্রচণ্ড গন্ধযুক্ত এই পানি ফুটিয়েও পান করা কঠিন।'

সমস্যাটি কেবল দক্ষিণ ঢাকায় সীমাবদ্ধ নয়। আগারগাঁওয়ের ৬০ ফিট এলাকার বাসিন্দা রেজাউল হাসান বলেন, 'মার্চ মাসের শুরু থেকেই পানির মান খুব খারাপ। ওয়াসায় অভিযোগ জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। উল্টো তারা ট্যাংক পরিষ্কার করতে এবং পানির ট্যাপের মুখে কাপড়ের ফিল্টার ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন।'


তেজগাঁও, মালিবাগ, মগবাজার, মধুবাগ, বাসাবো, মানিকনগর, জুরাইন, কল্যাণপুর, খিলগাঁওসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই এমন অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসার কয়েকজন কর্মকর্তা রাজধানীর নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সরবরাহ করা পানিতে পোকা পাওয়া যাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তাদের সন্দেহ, সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারে কোনো সমস্যা থেকে এটা ঘটতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত চলছে বলেও জানান এক কর্মকর্তা।

তবে ঢাকা ওয়াসার নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহজাহান মিয়া সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওয়াসার পাইপলাইনে সাধারণত কোনো সমস্যা থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকেরা তাদের পানির ট্যাংক নিয়মিত পরিষ্কার না করায় পানিতে দুর্গন্ধ হয়। আমি বলতে পারি, বর্তমানে আমরা খুব কম অভিযোগ পাচ্ছি।' তিনি আরও বলেন, 'কেউ যদি সরাসরি আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, আমরা দ্রুত লোক পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিই।'

পূর্ব জুরাইনের বাসিন্দা ও নাগরিক অধিকারকর্মী মিজানুর রহমান বলেন, তার এলাকায় নতুন পাইপলাইন বসানোর পরও পানির সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। তিনি বলেন, 'গরমকালে চাহিদা বেশি থাকলেও দিনের বেশির ভাগ সময় পানি থাকে না। দিনে মাত্র ঘণ্টা দুয়েকের জন্য যে পানি আসে, তা পানের অযোগ্য। এতে দুর্গন্ধের সঙ্গে ময়লা ও পোকাও থাকে। কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।'

ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ ও পোকার উপস্থিতিকে 'গভীর উদ্বেগজনক' বলে আখ্যা দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এম এইচ চৌধুরী লেনিন। তিনি বলেন, 'ঢাকায় এরই মধ্যে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। দূষিত পানির কারণে টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড ও ডায়রিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। দ্রুত সমাধান না করা হলে এই সমস্যা মহামারির কারণও হতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'পানি সরবরাহ নিয়ে ওয়াসার অবহেলা বহু বছরের। আমি আশা করি, এবার তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সমস্যার সমাধান করবে।'

মূল প্রতিবেদনঃ ডেইলি স্টার, প্রতিবেদকঃ দীপন নন্দী
গণযোগ/এমএইচ

Side banner
Side banner
Link copied!