কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে মাশুল (ফি) বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় গত এপ্রিলে কাঁচা পাট রপ্তানিতে মাশুল সাড়ে তিন গুণ ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে পাঁচ গুণ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। গত ২৬ জুন সেই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করা হয়েছে। অর্থাৎ আগের মাশুলই তারা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ব্যাংকগুলোকে আগের হারেই মাশুল আদায়ের নির্দেশনা দিয়েছে।
গত এপ্রিলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রতি বেল কাঁচা পাট রপ্তানিতে রাজস্ব বাড়িয়ে সাত টাকায় নির্ধারণ করা হয়, যা আগে ছিল দুই টাকা। অর্থাৎ এই মাশুল বাড়ানো হয় প্রায় সাড়ে তিন গুণ। আর পাটজাত পণ্যের প্রতি ১০০ টাকা রপ্তানি মূল্যের বিপরীতে রাজস্ব ১০ পয়সা থেকে পাঁচ গুণ বাড়িয়ে ৫০ পয়সা করা হয়।
এর আগে ১৯৯৫ সালের জুলাইয়ে মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২৬ জুন জারি করা সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘৭ এপ্রিল জারি করা মাশুল নির্ধারণসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করা হলো। পাশাপাশি আগের মতো প্রতি বেল কাঁচা পাট রপ্তানিতে সরকার রাজস্ব হিসেবে দুই টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। এ ছাড়া পাটজাত পণ্যের ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ টাকা রপ্তানি মূল্যের বিপরীতে ১০ পয়সা হারে মাশুল আদায়ের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।’
সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দিন, অর্থাৎ গত বছরের ১ জুলাই থেকে এ খাতে নগদ সহায়তা কমানো হয়। তখন বৈচিত্র্যময় পাটপণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে সরকার। এ ছাড়া পাটজাত পণ্যে নগদ সহায়তা ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং পাট সুতায় ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
বিদ্যমান রপ্তানি নীতি অনুযায়ী, কাঁচা পাট হচ্ছে শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানি পণ্য। একসময় বাংলাদেশি পাটপণ্যের বড় বাজার ছিল ভারত। কিন্তু বাংলাদেশের পাটপণ্য রপ্তানির ওপর দেশটি অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে রাখায় দেশটিতে পাট সুতা রপ্তানি কমে ৫ ভাগের ১ ভাগে নেমেছে।
এদিকে পাটজাত পণ্য রপ্তানি বছর বছর কমছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১২ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলারের পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে হয় ৯১ কোটি ১৫ লাখ ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আরও কমে হয় ৮৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার, যা সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরও কমে ৮২ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ) সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে ৭৫ থেকে ৮০ লাখ বেল কাঁচা পাট উৎপাদন হয়। এর মধ্যে পাটপণ্য উৎপাদনের জন্য লাগে ৬০ লাখ বেল।
পাট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, চীনসহ ১৩টি দেশে ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৫ বেল কাঁচা পাট রপ্তানি হয়েছে। ওই অর্থবছরে ১ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বা ১৬ কোটি ৪ লাখ ৮৭ হাজার মার্কিন ডলারের কাঁচা পাট রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ৯ কোটি ডলারের বেশি এসেছে ভারত থেকে।
গণযোগ/এমএইচ