ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই, ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
gonojog24
Bongosoft Ltd.

‘শত্রুদের’ অস্ত্রবিরতির বাস্তবতা নিয়ে ইরানের সংশয়


গণযোগ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০২৫, ১০:৪৬ পিএম আপডেট: জুলাই ১, ২০১৯ ১১:৩৯ এএম ‘শত্রুদের’ অস্ত্রবিরতির বাস্তবতা নিয়ে ইরানের সংশয়
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান আবদুর রহিম মুসাভি

 

সম্প্রতি ১২ দিনের যুদ্ধের পর ঘোষিত অস্ত্রবিরতির বাস্তবতা নিয়ে ‘গভীর সংশয়’ প্রকাশ করেছে ইরান। তেহরানের মতে, ইসরায়েল সত্যিই এই অস্ত্রবিরতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে কি না, তা নিয়ে তাদের গুরুতর সন্দেহ রয়েছে।

গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে। এতে দ্বিপাক্ষিক সংঘাত চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। এই হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীরা নিহত হন। ইসরায়েলের দাবি, তারা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে বাধা দিতেই এই অভিযান চালিয়েছে। তবে তেহরান বরাবরই বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং জ্বালানি চাহিদা পূরণের জন্য নির্ধারিত। এই সংঘাতের জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান পারমাণবিক আলোচনা স্থগিত হয়ে পড়ে।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান আবদুর রহিম মুসাভি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ শুরু করিনি, তবে আগ্রাসনের জবাব সর্বশক্তি দিয়ে দিয়েছি। এখন প্রশ্ন হলো, শত্রুপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে কি না—এ নিয়ে আমাদের গভীর সংশয় রয়েছে। যদি তারা আবার হামলা চালায়, আমরা কঠোর জবাব দেব।’ এই মন্তব্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষিত অস্ত্রবিরতির ছয় দিন পর এলো।


একই দিন জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসকে লেখা চিঠিতে ইরান দাবি করে, এই মাসের যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রই দায়ী এবং তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছেন, নিরাপত্তা পরিষদ যেন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধ সূচনাকারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং তাদের দায় ও পুনর্গঠন নিশ্চিত করে। ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দেন, ইরান যদি উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করে, তাহলে আবারও হামলা চালানো হবে।


আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ জানিয়েছে, ইরান ২০২১ সালেই ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যেখানে ২০১৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৩.৬৭ শতাংশ। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজন ৯০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ইসরায়েলের হাতে ৯০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, যদিও তা কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি।


ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ১২ দিনের যুদ্ধে কমপক্ষে ৬২৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং প্রায় ৪,৯০০ জন আহত হয়েছেন। অপরদিকে, ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে ২৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। একইসঙ্গে, ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানে ডজনখানেক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং কিছু ড্রোন ও অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।

রোববার ইরানের পার্লামেন্ট এক নতুন আইনে স্টারলিংকসহ যেকোনো অনুমোদনহীন যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। একই দিনে ইরানের বিচার বিভাগ জানায়, ইসরায়েলের বিমান হামলায় তেহরানের এভিন কারাগারে অন্তত ৭১ জন নিহত হন। ধ্বংস হয় কারাগারের একটি প্রশাসনিক ভবন, যেখানে রাজনৈতিক বন্দি ও বিদেশি নাগরিকরা আটক ছিলেন। নিহতদের মধ্যে কারারক্ষী, কর্মকর্তা, দর্শনার্থী এবং পাশের বাসিন্দারাও রয়েছেন।

ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল ব্যারো জানান, হামলায় ফরাসি নাগরিক সেসিল কোহলার ও জ্যাক প্যারিস ক্ষতিগ্রস্ত হননি বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তিনি এই হামলাকে ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে উল্লেখ করেন। পরদিন ইরান জানায়, এভিন কারাগার থেকে কিছু বন্দিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যদিও সংখ্যা বা পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। এখানে শান্তিতে নোবেলজয়ী নার্গিস মোহাম্মদি ও আরও বহু বিদেশি বন্দি রয়েছেন।

গণযোগ/এমএইচ

Side banner
Side banner
Link copied!