ঢাকা শনিবার, ১০ মে, ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২
gonojog24
Bongosoft Ltd.

আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ হচ্ছে?


গণযোগ | নিজস্ব প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ৯, ২০২৫, ০২:১৫ পিএম আপডেট: জুলাই ১, ২০১৯ ১১:৩৯ এএম আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ হচ্ছে?
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে অবস্থানরত লোকজনের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত

 

গত বছরের ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা সিংহভাগ দেশ ছাড়েন। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তোলে জুলাই গণঅভ্যথ্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো।

 

এদিকে, গত রাত থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আবারও মাঠে নেমেছে জাতীয় নাগরিক পাটিসহ বিভিন্ন সংগঠন। তারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাস বাভন যমুনার কাছেই অবস্থান শুরু করেন।

 

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে যান জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তাঁদের সঙ্গে সেখানে অবস্থান করেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।


আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে স্লোগান দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। রাত দুইটার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে 
এনসিপির পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। রাত একটার পর হেফাজতে ইসলামের বেশ কিছু নেতা-কর্মী যমুনার সামনে যান। রাত দেড়টার দিকে এবি পার্টির কিছু নেতা-কর্মী যমুনার সামনে উপস্থিত হন। রাত দুইটার দিকে সেখানে যান ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা। 


রাত দুইটার কিছুক্ষণ আগে যমুনার সামনে মাইকে স্লোগান ধরেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এ সময় যমুনার আশপাশ স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে। 

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে নানা স্লোগান  আজ শুক্রবার আবারও দুপুর ১২টার দিকে মিছিল নিয়ে যমুনার পাশে ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের পাশের ফোয়ারার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তাঁরা।  

 

সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘যতক্ষণ না পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে নিবন্ধন বাতিল করে নিষিদ্ধ করা হয় এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় সুস্পষ্ট রোডম্যাপ আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই রাজপথ ছাড়ব না।’

আজ (৯ মে) শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে যমুনার সামনে চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দিয়েছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। 

 

আওয়ামী লীগ বা তার কোনো কোনো সহযোগী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন।

তিনি একটি গণমাধ্যমে গতকাল বলেছেন, আওয়ামী লীগ বা তার কোনো কোনো সহযোগী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার সম্ভাবনা রয়েছে। নিষিদ্ধ করার মতো প্রয়োজনীয় আইনও দেশে রয়েছে।

 

সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ‘কয়েকটি কথা’ শিরোনামে  এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন , ‘একটি দলের এক্টিভিস্টরা বারবার লীগ নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ছাত্ররা রাজি ছিল না, এটা বলে বেড়াচ্ছেন। মিথ্যা কথা। ক্যাবিনেটে প্রথম মিটিং ছিল আমার। আমি স্পষ্টভাবে এ আইনের অনেকগুলো ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম।

নাহিদ-আসিফও আমার পক্ষে ছিল স্বভাবতই। দল হিসাবে বিচারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হলে একজন উপদেষ্টার জবাব ছিল ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের মত পশ্চাতপদ উদাহরণ আমরা আমলে নিতে পারি কিনা। এ যুক্তি যিনি দিয়েছিলেন, একটি দলের এক্টিভিস্টরা আজ সমানে তার পক্ষে স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন ছাত্রদের কুপোকাত করতে। অথচ, উনার সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই। মিছে বিরোধ লাগানোর অপচেষ্টা করে কোন লাভ নেই।’

 

মাহফুজ আলম তাঁর পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘বলে রাখা ভালো, দুজন আইন ব্যাকগ্রাউন্ডের উপদেষ্টা (একজন ইতোমধ্যে মারা গিয়েছেন) ও আমাদের বক্তব্যের পক্ষে ছিলেন। সংস্কৃতি উপদেষ্টাও পক্ষে ছিলেন। গতকাল বিকালে কথা হয়েছে। দল হিসাবে লীগের বিচারের প্রভিশন অচিরেই যুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন উক্ত উপদেষ্টা। উনাকে ধন্যবাদ।’

 

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল গত রাতে দেশের একটি শীর্ষ গণমাধ্যমকে আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি সমাজে প্রবলভাবে রয়েছে। গণ–অভ্যুত্থানকালে গণহত্যার পরও তাদের মধ্যে অপরাধবোধের অনুপস্থিতি, ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন হীন কর্মকাণ্ড ও পলাতক শেখ হাসিনার চরম উসকানিমূলক বক্তব্য দেখার পর এই দাবি সমাজে আরও সোচ্চারভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। তাই আওয়ামী লীগ বা এর কোনো কোনো অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করার সম্ভাবনা রয়েছে।’

 

ওদিকে, চলতি বছরের মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো পরিকল্পনা না থাকার কথা তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তবে দলটির যেসব নেতার বিরুদ্ধে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বাংলাদেশের আদালতে বিচারের আওতায় আনার কথা বলেছেন তিনি।

 

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) প্রেসিডেন্ট ও সিইও কমফোর্ট ইরোর নেতৃত্বে আসা একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

 

আইসিজির প্রতিনিধি দলকে তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকলে, আওয়ামী লীগের নেতাদের হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে।

 

জাতিসংঘের অবস্থান

অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবির মধ্যে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ না করার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ। জুলাই-আগস্টে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে গতকাল বুধবার প্রকাশিত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান দল এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ২য় সপ্তাহে এই  প্রতিবেদনে জাতিসংঘ বলেছে, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, তাতে প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্র ফেরার পথ বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং বিপুলসংখ্যক ভোটার কার্যত ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে।

 

আওয়ামী লীগ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান

শুক্রবার (৯ মে) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ও সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিএনপির হিসেবে আমরা এই সিদ্ধান্ত নেওয়া মালিক নই। মঈন খান বলেন, এটা নিয়ে আমাদের দলের মহাসচিব বলেছেন- ‘এটা জনগণের সিদ্ধান্তের বিষয়। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কারা নির্বাচন করবে আর কারা করবে না।’ 

বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগকে জিজ্ঞাসা করা উচিত, তারা কি আসলে নির্বাচন, গণতন্ত্র চায়? গত ৯ মাসে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা কি বলেছে- গত ১৫ বছর তারা মানুষের ওপর ফ্যাসিস্ট কায়দায় জলুম করেছে, লুটপাট করেছে, দেশকে তছনছ করে দিয়েছে, তারা ভুল করেছে, দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা স্বীকার করে নিচ্ছে।

 

সরকারের সর্বশেষ অবস্থান

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে আজ শুক্রবার (৯ মে) বিকেল ৩টার কিছু আগে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এ ব্যাপারে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইতিমধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

 

আজ (৯ মে) বিকালে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল তার এক ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরনের সুযোগ রাখার লক্ষ্যে আইসিটি আইনে সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বিধান আইন মন্ত্রনালয়ের খসড়ায় ছিল। আইন উপদেষ্টা হিসেবে আমি নিজে এটা উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উত্থাপন করেছি। আমার উত্থাপিত খসড়ার আমিই বিরোধিতা করবো এটা কিভাবে সম্ভব? উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কোন উপদেষ্টা কি ভূমিকা রেখেছেন এনিয়ে আমাকে, ছাত্র উপদেষ্টাদের বা অন্য কাউকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকুন। সেখানে যা সিদ্ধান্ত হয় তার দায় দায়িত্ব আমাদের প্রতিটি উপদেষ্টার। আমাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের প্রশ্নে কোন দ্বিমত নেই। তবে পদ্ধতি নিয়ে সবার নিজস্ব মত থাকতেই পারে।’ 

গণযোগ/এমএইচ

Side banner
Side banner
Link copied!