গতকাল ৩ মে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দু’দিন ব্যাপী জেলা ও মহানগরী আমীর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সকাল ৯ টায় মগবাজারস্থ আল-ফালাহ মিলনায়তনে এ সম্মেলন হয়।
জামায়াত আমীর সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ২০১১ সালের এপ্রিল মাসের পর দীর্ঘ ১৪ বছরে এ ধরনের প্রোগ্রাম করার সুযোগ পাইনি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আবার এই সুযোগ করে দিয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং তাদের সঙ্গীরা বাংলাদেশকে শাসন এবং শোষণ করেছেন। পুরো সময় জুড়ে তারা এই দেশের বিরোধী দল, মত এবং বিশেষভাবে ইসলামপন্থী জনগণের উপর বিভিন্ন পর্যায় তাণ্ডব চালিয়েছে। কমপক্ষে তিনটি গণহত্যা সংঘটিত করেছে।
প্রথম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তৎকালীন বিডিআর হেডকোয়াটার পিলখানায়। যেখানে আমরা হারিয়েছি ৫৭ জন চৌকস দেশপ্রেমিক প্রতিশ্রুতিশীল সামরিক অফিসার। এর পরে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে, হেফাজতের আহ্বানে যে সমাবেশ হয়েছিলো সেই সমাবেশে রাতের বেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে গোটা অন্ধকারে নির্বিচারে মানুষগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। আর তৃতীয় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে গত বছরের জুলাই মাসের মধ্য দিনগুলো থেকে আগস্ট মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত। ফ্যাসিবাদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অনেক নেতা সহকর্মী, বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এবং আলেম-উলামা।
তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবাণীতে গত বছরের আগস্ট মাসের ৫ তারিখ ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। আপনারা সাক্ষী প্রথম তিনদিন কার্যত কোন সরকার ছিলো না। এ রকম পরিবর্তন যেসব দেশে সংঘটিত হয়েছে সেখানে ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা পারিপার্শ্বিক এ ঘটনাবলী থেকে শিক্ষা নিয়েছি এবং খুবই অনুভব করছিলাম জাতিকে শান্তি-শৃঙ্খলা ও ধৈর্য ধরার আহ্বান করা প্রয়োজন। আমরা ৫ আগস্ট রাতেই সে কাজটা করেছিলাম।
তিনি আরও বলেন, এ পরিবর্তনের পর আমাদের প্রথম কাজ ছিলো শহীদ পরিবারের কাছে যাওয়া এবং দাঁড়ানো। দল হিসেবে নিশ্চই আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরেও মানবিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমরা চেষ্টা করেছি শহীদ পরিবারের কাছে যাওয়ার। তাদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার এবং একটা সংগঠন হিসেবে যতটুকু সম্ভব সেই সাপোর্টটুকু তাদেরকে আমরা দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমাদের সাপোর্টও তারা অনুগ্রহ করে গ্রহণ করেছে। এরপর আমাদের অগ্রাধিকার ছিলো যারা আহত এবং পঙ্গু হয়েছেন তাদের দিকে নজর দেয়া।
তিনি বলেন, অবশ্যই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হতে হবে। এই সুষ্ঠু এবং বস্তুনিষ্ঠতার স্বার্থে কতিপয় সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। এ বিষয় আমরা আমাদের সুপারিশমালা সংশ্লিষ্ট কমিশনগুলোর কাছে পেশ করছি। আমরা সকল দলের প্রতি আহ্বান জানাবো রাজনীতি নিজের জন্য নয়। রাজনীতি দেশ এবং জনগণের জন্য। আমরা যত বেশী সহযোগিতা করবো ততো বেশী জাতি উপকৃত হবে। ততোটাই আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু এবং সুন্দর হবে। ইতোমধ্যে আমরা বলেছি যে, অবশ্যই যারা অপরাধী তাদের বিচারটা দৃশ্যমান হোক জাতি এটা দেখতে চায়।
যদি এদের বিচার হয় তাহলে আগামী নির্বাচনেও কালো টাকা এবং পেশী শক্তির প্রভাব খাটাতে পারবে না। আর এ রকমের দুঃসাহস হয়তো কেউ দেখাবে না। কিন্তু বিচার যদি না হয় এর আশঙ্কা তো থেকেই যাবে। আমরা এই নির্বাচনকে অর্থবহ করার জন্য এবং জনমতের শতভাগ প্রতিফলন ঘটানোর জন্য আমাদের দেশের পার্লামেন্টকে কোয়ালিটিসম্পন্ন পার্লামেন্ট দেখতে চাই। এজন্য নির্বাচনকে পেশীশক্তি এবং কালো টাকার প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, অতিসম্প্রতি নারী বিষয়ক সংস্কার কমিটি প্রধান উপদেষ্টা বরাবর সুপারিশমালা সাবমিট করেছে। আমরা বিস্মিত, আমাদের বিদ্যমান কালচার তমদ্দুন এর সম্পূর্ণ বিপক্ষে। তারা কিছু সুপারিশমালায় এনেছেন এগুলো বিবেচনা করার প্রশ্নই আসে না। শুধু তাই নয় তাদের কিছু কিছু সুপারিশ আল্লাহর বিধানের বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে পেশ করা হয়েছে। তাদের এই সুপারিশ গ্রহণ করলে কুরআন পরিবর্তন হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, সাংবাদিক বন্ধুগণের প্রতি বিশেষ অনুরোধ, আপনারা এই জাতির সন্তান, এই জাতির বিবেক, আয়না। আপনাদের দর্পণে সেই চিত্রগুলো তুলে ধরুন এবং আপনারাও এই কাজে সহযোগিতা করুন। তাহলে দেশ আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। আপনারা দায়িত্বশীল আচরণ করে সাহসিকতার সাথে এগিয়ে আসবেন সেই প্রত্যাশা আমরা রাখতে চাই।
আমরা মহান রবের দরবারে দোয়া করি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুরআন ভিত্তিক যে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র করতে চায় আল্লাহ যেন সেই কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার পথে আমাদেরকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সাহায্য করেন। আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জাতিগঠনের যাত্রাপথে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার তওফিক দান করুন।
এ সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য পেশ করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। সম্মেলন পরিচালনা করেন সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মাওলানা মোঃ শাহজাহান, এড. মুয়াযযম হোসাইন হেলাল, এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়েরসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী ও কর্মপরিষদ সদস্য, জেলা ও মহানগরী আমীরবৃন্দ।
গণযোগ/এমএইচকে