যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের দ্বিতীয় দিনের আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশি পণ্যে ঘোষিত পাল্টা শুল্কের হার কমানো নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় শুরু হয়ে দ্বিতীয় দিনের বৈঠক শেষ হয় সাড়ে ৩টার দিকে। বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। সঙ্গে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাওসার চৌধুরী। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি অংশ নিয়েছেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আলোচনায় যে অগ্রগতি হয়েছে, তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ইতিবাচক ফলাফল আশা করছে। তবে চূড়ান্ত ফয়সালা শেষ দিনই হবে। তিন দিনের আলোচনা আজ বৃহস্পতিবার শেষ হবে। বাংলাদেশ আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে অবস্থানপত্র পাঠিয়েছে, যার ভিত্তিতে দরকষাকষি চলছে। আলোচনা শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি চুক্তি হতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পণ্যে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা রয়েছে, যা আগামীকাল ১ আগস্ট কার্যকর হওয়ার কথা।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়ানো এবং তাদের পণ্যে শুল্ক কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাংলাদেশ পাল্টা শুল্ক কমানোর চেষ্টা করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির আগে দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্যে বর্তমানে গড়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। তবে ২ এপ্রিল থেকে বিশ্বের সব দেশের ১০ শতাংশ ‘বেজ ট্যারিফ’ আরোপ করা হয়। পাল্টা শুল্কের নতুন হার নির্ধারিত হলে ‘বেজ ট্যারিফ’ থাকবে না। উদাহরণস্বরূপ– যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে তাহলে মোট শুল্কহার দাঁড়াবে ৩৫ শতাংশের মতো।
ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি বছরের ২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ ৬০টি দেশের জন্য পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। ৯ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন সবার জন্য ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক রেখে সব দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে। স্থগিতাদেশের সময় শেষ হওয়ার আগেই ৮ জুলাই ট্রাম্প নতুন করে ঘোষণা দিয়ে জানান, বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্কহার হবে ৩৫ শতাংশ।
মার্কিন পাল্টা শুল্ক কমাতে চূড়ান্ত দফার আলোচনার আগে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দেশটি থেকে আগামী এক বছরের মধ্যে ১৫০ কোটি ডলার মূল্যের গম, ডাল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। এ শুল্কহার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
সরকার ইতোমধ্যে জি-টু-জি ভিত্তিতে বছরে ৭ লাখ টন গম কেনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে। অন্যদিকে সম্প্রতি ২ লাখ ২০ হাজার টন গম কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। এর বাইরে সরকারিভাবে এলএনজি আমদানি বাড়ানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার পরিকল্পনা করছে সরকার। এসবের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ১৫০ থেকে ২০০ কোটি ডলার আমদানি বাড়াতে তুলা, গম, সয়াবিন ও ডাল আমদানিকারকদের একটি প্রতিনিধি দলও যুক্তরাষ্ট্রে গেছে।
গণযোগ/এমএইচ