ঈদুল আযহা উদ্যাপন ও ১০ দিনের লম্বা ছুটির কারণে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে। এ চাপের কারণে ঢাকা থেকে বের হওয়ার পয়েন্টগুলোতে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া সড়কের পাশাপাশি ট্রেন, লঞ্চসহ নানা মাধ্যমে নাড়ির টানে ছুটছেন নগরবাসী। ঘরমুখো মানুষে পাশাপাশি রয়েছে শহরে কোরবানির পশুবাহী যানের চাপও।
সকাল ১১ টায় সায়েদাবাদ এলাকায় ব্যপক যানজট দেখা গেছে। সায়েদাবাদ থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৯ জেলা, বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও সিলেটের দিকে বাস ছেড়ে যায়।
বিভিন্ন বাস কাউন্টারে উপস্থিত যাত্রীরা জানিয়েছেন তাদের বাস নির্ধারিত সময়ে পৌছায়নি।
ইমাদ বাস কাউন্টারে অপেক্ষনান যাত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, তাদের বাস সকাল ১০ টায় সায়েদাবাদ থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা। ১১ টার পরেও বাস কাউন্টারে পৌঁছায়নি। ওই যাত্রী বাসের জন্য ধোলাইপাড় কাউন্টারে অপেক্ষা করছিলেন।
এদিকে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে সকাল থেকে কাউন্টারগুলোতে মানুষের ভিড় ছিল। সরেজমিন বেলা ১১ টা থেকে এক ঘণ্টা গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, যাত্রী বোঝাই বাস ঢাকা ছাড়ছে। তবে এখনও অনেক যাত্রী গাড়ি পাচ্ছেন না।
ঝিনাইদহে যাবে মোহম্মদ সাহরিয়ার। তিনি দুপুর ১২ টায় বলেন, 'প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে টিকিট খুঁজছি কোন বাসের টিকিট পাচ্ছি না।' মহম্মদ জাফর কুষ্টিয়া খোকসা যাবেন, তিনিও একঘণ্টা ধরে টিকিট খুঁজছেন।
কোটালিপাড়া স্টার এক্সপ্রেসর গাবতলী কাউন্টার ম্যানেজার হৃদয় বলেন, এবার যাত্রী সংখ্যা ভালো। তাছাড়া বাসের টিকিট না পেয়ে গাবতলী বাসটার্মিনালের সামনে থেকে কিছু যাত্রীকে ট্রাকে উঠতে দেখা যায়। ট্রাকটিতে হাটে গরু নিয়ে এসেছিল বলে জানা গেছে। ট্রাকের চালকের সহকারিকে বলতে শোনা যায় কুষ্টিয়া ৫০০ টাকা।
এদিকে গুলিস্তানে একটি বাস কাউন্টারের এক প্রতিনিধি বলেন, গুলিস্তান থেকে বাস সময় মতো ছাড়লেও ধোলাইপাড় পর্যন্ত পৌঁছাতে অনেক সময় লাগছে। কারণ ফ্লাইওভার ও মূল সড়কে যানজট বেশি। এদিকে শাহজাহানপুর, গোলাপবাগ, গোপীবাগ এলাকায় গরুর হাট থাকায় ব্যাপক সংখ্যক ট্রাক ঢুকছে। অনেক ট্রাক সড়কের ওপর দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া বাড়তি যানবাহনতো আছেই। ফলে পুরো সড়কের কোথাও কোথাও একেবারে জমে আছে। আবার কোথাও কোথাও একেবারে ফাঁকা।
ধোলাইপাড় মোড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য পুলিশের পাশাপাশি সেনা বাহিনীর সদস্য, আনসার, জেল পুলিশ, কমিউনিটি পুলিশকে যৌথভাবে কাজ করতে দেখা গেছে।
এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সেঙ্গে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অনেক বেড়েছে।
ঈদ উপলক্ষে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৯ জেলাসহ অন্যান্য জেলার মানুষ রাজধানী ছাড়ছেন এইপথে। আবার কোরবানির পশু নিয়ে রাজধানীমুখী হচ্ছেন বেপারীরা। এই দুই এর চাপ পড়েছে ঢাকা-ভাঙ্গা মহাসড়কে। তবে পদ্মাসেতুর টোল পর্যন্ত এই চাপ বেশি দেখা গেছে।
দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে শ্রীনগর রেল ওভার ব্রীজের আগে থেকেই গাড়ি চলছে খুব ধীরে। ৭৩৬ মিটার এই ব্রীজ পার হতে বেশিরভাগ গাড়ির ১৫ মিনিট লেগে যাচ্ছে। কোনো সময় আরও বেশি সময়ও লাগছে।
এরপরে বড় জট সৃষ্টি হয়েছে পদ্মাসেতু টোল প্লাজাতে।
তবে সকালের তুলনায় দুপুর ও বিকালে চাপ কিছুটা কমেছে।
এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল পরিদর্শনের কথা ছিলো।
সকাল ১১.১০ টায় এক বার্তায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল হাসান জানান, অনিবার্য কারণবশত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল পরিদর্শন করবেন না।
তবে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাবতলী বাস টার্মিনাল পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল গাবতলী বাস টার্মিনাল পরিদর্শন করেন।
এসময় যাত্রীরা টিকিট পাচ্ছেনা এ বিষয় জানতে চাইলে টিবিএসকে তিনি বলেন, 'আজকের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে অনেক যায়গায়। দুপুর ১২ টারদিকে আমার কাছেও টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ করেছিল এক যাত্রী যখন তাকে নিয়ে কাউন্টারে গেলাম বিকাল ৫ টায় গাড়ি ছাড়বে এমন টিকিট পেলাম কিস্তু যাত্রী এতক্ষণ অপেক্ষা করে যেতে চাইলো না। এখন ঈদের এই সময় তাৎক্ষণিক তো বাস পাওয়া যায় না। তাকে অপেক্ষা করে যেতে হবে। আজকে যাত্রীর চাপ বেশি।'
তথ্যসূত্রঃ দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
গণযোগ/এমএইচ