ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
gonojog24
Bongosoft Ltd.

‘এনবিআর ভাঙা’ নীতিগতভাবে ঠিক হলেও, বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটি ঠিক হয়নি -ড. দেবপ্রিয় 


গণযোগ | নিজস্ব প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২৫, ০২:২৩ পিএম আপডেট: জুলাই ১, ২০১৯ ১১:৩৯ এএম ‘এনবিআর ভাঙা’ নীতিগতভাবে ঠিক হলেও, বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটি ঠিক হয়নি -ড. দেবপ্রিয় 
ফাইল ছবি

 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দুই ভাগ করার সিদ্ধান্ত 
নীতিগতভাবে ঠিক হলেও, এটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটি যথাযথ হয়নি। পেশাজীবীদের মতামত উপেক্ষা করে এবং অন্যান্য অংশীজনদের সীমিত করে যেভাবে এটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তা ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

সোমবার (১৯মে) এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত "বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৫-২৬: নীতি সংস্কার ও জাতীয় বাজেট" শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, “এনবিআর ভেঙে দুই ভাগ করার প্রস্তাব আমাদের শ্বেতপত্রেও ছিল। কিন্তু যেভাবে এটি করা হয়েছে, সেখানে আলোচনা ছিল না, পেশাজীবীদের ভূমিকা সংকুচিত করা হয়েছে এবং অংশীজনদের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। এখন এটি সঠিক প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনা জরুরি।”

তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলো উদ্বেগজনক। “তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি কমেছে, ঋণ প্রবাহ তেমন বাড়েনি, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে, বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) হ্রাস পেয়েছে এবং পুঁজিবাজারের সূচকগুলো নিম্নমুখী। এই প্রেক্ষাপটে কর্মসংস্থান কীভাবে বাড়বে? বেকারত্ব বেড়ে গেছে, শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, এটা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।”

রাজস্ব আদায়ে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জিডিপির অনুপাতে কর আদায় এখনো ১০ শতাংশের নিচে, পরোক্ষ করের হার বেশি – যা প্রমাণ করে সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি কর দিচ্ছে।”

বাজেট ব্যয়ের দিক তুলে ধরে দেবপ্রিয় বলেন, “বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে সুদ পরিশোধ ও ভর্তুকিতে। অথচ অর্থনীতির চালিকা শক্তিগুলো নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা নেই, সবকিছু চলছে এডহক ভিত্তিতে।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমান সরকারের আমলে চোরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। এখন রাজনীতিবিদরা দূরে সরে গেছেন, ব্যবসায়ীরা নিষ্প্রভ, কিন্তু আমলারা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন।”

সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারের কিছু উদ্যোগ থাকলেও বাস্তবায়নে গতি নেই বলেও উল্লেখ করেন দেবপ্রিয়। “টাস্কফোর্সের সুপারিশ অনুযায়ী দ্বি-বার্ষিক পরিকল্পনা করা দরকার ছিল। কিন্তু আমরা দেখছি, আগের সরকারের ফিসক্যাল কাঠামোই এখন ধুয়ে-মুছে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা কাঙ্ক্ষিত নয়।”

বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রভাব তুলে ধরে তিনি বলেন, “ভারত-বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ঘিরে জটিলতা এবং বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার সংকটে বাংলাদেশকেও চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে। এর মধ্যেই সরকার নতুন বাজেট তৈরি করছে।”

সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশকে ‘বাস্কেট কেস’ হিসেবে দেখার পুরনো নেতিবাচক ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশের সক্ষমতা ও উন্নয়ন নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে।” একই সঙ্গে তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি স্থিতিশীল ও ন্যায্য আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

গণযোগ/এমএইচ

Side banner
Side banner
Link copied!