লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দিন উমর বলেছেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের পর জামায়াতে ইসলামী শক্তিশালী হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দেশে দক্ষিণপন্থীদের উত্থান হয়েছে।
রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহারের অভিযোগে তিনি তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিরও (এনসিপি) সমালোচনা করেছেন এবং বিএনপিকে সবচেয়ে প্রগতিশীল বলে মনে করছেন তিনি।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দিন উমর।
‘সংস্কার নয়, জনগণের সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে শ্রমিক–কৃষকের গণ–অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক প্রস্তুতি নিন’ শিরোনামে এ সভার আয়োজন করে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল।
বদরুদ্দিন উমর বলেন, ‘৫ আগস্টের পর জামায়াতে ইসলামী শক্তিশালী হয়েছে। এখন দক্ষিণপন্থীদের প্রভাব বেড়েছে। তাদের একটা উত্থান হয়েছে এখন। ছাত্রদের নেতৃত্বে যে পার্টি হয়েছে, সে পার্টির বক্তব্যে শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতি মানুষ নিয়ে কোনো কথা নাই। তারা ভাবছে ধর্মকে ব্যবহার করবে। সে জন্য তাদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।’
বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে বিএনপিকে সবচয়ে প্রগতিশীল মনে হচ্ছে মন্তব্য করে বদরুদ্দিন উমর বলেন, ‘দুঃখজনক হচ্ছে বাংলাদেশে এখন যে পরিস্থিতি হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে বিএনপিকে সবচেয়ে প্রগতিশীল মনে হচ্ছে। তারাই কথাবার্তা বলছে।’
বদরুদ্দিন উমর বলেন, ‘ছাত্রদের নেতৃত্বে যে আন্দোলন হয়েছে সেটা যে একটা গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সে রকম কিছু নয়। গণ–অভ্যুত্থান যেটা বলা হচ্ছে, সেটা আসলে একটা বিস্ফোরণের মতো ব্যাপার। একটা হলো দীর্ঘদিনের গণ–আন্দোলনের শীর্ষে গিয়ে একটা অভ্যুত্থান, আরেকটা হলো কোনো আন্দোলন করতে না পেরে দীর্ঘদিনের একটা ক্ষোভ ধামাচাপা থাকার ফলে একটা পরিস্থিতি। বাংলাদেশে দ্বিতীয় ধরনের অবস্থা তৈরি হয়েছিল।’
বদরুদ্দিন উমর বলেন, এই অভ্যুত্থান গণতান্ত্রিক একটা কর্মসূচির অধীনে দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে হয়নি, ছাত্রদের বক্তব্যে শ্রমিকদের কোনো কথা নেই, কৃষকের কোনো কথা নাই। তার কারণ হচ্ছে এ আন্দোলন তো কোনো শ্রেণিকাঠামোর বিরুদ্ধে আন্দোলন না। যে ব্যবসায়ী শ্রেণি এ দেশ শাসন করে আসছে ’৭২ সাল থেকে তারা এখনো আছে।
এ গণ–অভ্যুত্থানকে শাসকশ্রেণির অন্তর্দ্বন্দ্বের ফল হিসেবে আখ্যায়িত করেন বদরুদ্দিন উমর। অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এ সরকারও শাসকশ্রেণির খেদমতগার হিসেবে থাকায় এখানে এক বছরে এমন কিছু ঘটেনি, যেটাকে বলা যেতে আশাবাদী হওয়ার মতো ব্যাপার।’
তিনি বলেন, ‘সংস্কার সংস্কার করে সবাই চিৎকার করছে। সংস্কার চাইতে পারে তারা, যারা ব্যবস্থাকে স্বীকার করে নিয়েছে। যারা সংস্কার চায়, তারা এ ব্যবস্থার উচ্ছেদ চায় না। বিদ্যমান যে ব্যবস্থাটা আছে, সেটা উচ্ছেদ করার আন্দোলন করতে হবে। যে শ্রেণিশাসন আছে, সেটার উচ্ছেদ চাইতে হবে। যে পরিস্থিতি রয়ে গেছে, সেটা চললে এ দেশের কোনো উন্নতি হবে না।’
একটা নির্বাচনের জন্য সবাই দাঁড়িয়ে আছে মন্তব্য করে বদরুদ্দিন উমর বলেন, ‘নির্বাচন করে কী হবে? নির্বাচন করলে এ শাসনকাঠামোর মধ্যে থেকে একটা দল আসবে। গণ–অভ্যুত্থানের ফলে মানুষের মনে যে আশার সঞ্চার হয়েছিল, সে আশা অনুযায়ী কোনো পরিবর্তন হবে না।’
তিনি, শ্রমিক–কৃষক ও মেহনতি মানুষের মুক্তি সংগ্রাম সফল করতে সংগঠন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। জনাব ওমর বলেন ‘লেনিন বলেছিলেন, জনগণের সংগঠন ছাড়া কিছু নেই। যেমন সংগঠনের জনগণ ছাড়া কেউ থাকে না। মেহনতি মানুষের মুক্তি সংগ্রামকে সফল করতে হলে সংগঠন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।’
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘দিল্লির মদদ পেয়ে বাংলাদেশকে ভারতের আশ্রিত দেশে পরিণত করেছিল আওয়ামী লীগ। এখন ভারতে বসে নানা ধরনের চক্রান্ত করছে তারা। মুক্তিযুদ্ধকে ফ্যাসিবাদের হাতিয়ারে পরিণত করেছিল আওয়ামী লীগ।’
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সংগঠক ভূলন ভৌমিক এবং বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল।
গণযোগ/এমএইচ