ঢাকা রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
gonojog24
Bongosoft Ltd.

বিমান ভ্রমণের উপযুক্ত না হওয়ায় খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রায় বিলম্ব


গণযোগ | গণযোগ ডেস্ক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ১০:৩৩ এএম আপডেট: জুলাই ১, ২০১৯ ১১:৩৯ এএম বিমান ভ্রমণের উপযুক্ত না হওয়ায় খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রায় বিলম্ব
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ছবি:সংগৃহীত

 

রাজধানীর বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিমান ভ্রমণের মতো উপযুক্ত নয়। তাই উন্নত চিকিৎসায় জন্য তার লন্ডনযাত্রা বিলম্বিত হচ্ছে।  চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিলেই তাকে লন্ডনে নেওয়া হবে। মেডিকেল বোর্ডের সর্বশেষ এ পর্যালোচনার কথা শনিবার (৬ ডিসেম্বর) জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।

এদিকে মেডিকেল বোর্ডের এমন সিদ্ধান্তের ফলে খালেদা জিয়াকে লন্ডন যাত্রার বিষয়টি এখন স্পষ্ট নয়। যদিও বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের কেউ কেউ বলেছেন, ফ্লাই করার উপযোগী হলে আগামী মঙ্গলবার ঢাকায় আসতে পারে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, সে ক্ষেত্রে বুধবার তাকে লন্ডনে নেওয়া হতে পারে। 

এদিকে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আগামী মঙ্গলবার ঢাকায় আসার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলে ঢাকায় এসে পরদিন বুধবার খালেদা জিয়াকে নিয়ে সেটি লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হবে। সূত্র আরও জানায়, জার্মান এভিয়েশন কোম্পানি এফএআই অ্যাভিয়েশন গ্রুপ গতকাল তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় অবতরণ এবং ১০ ডিসেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার জন্য ফ্লাইট শিডিউল আবেদন করেছে।

মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘ম্যাডামের অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ট্রাভেল করার মতো অবস্থা হয়নি। এটা কবে হবে, এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে বোর্ড আশাবাদী, উনি উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ যেতে পারবেন। তাকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন। মাঝেমধ্যে কিছু কথা বলার চেষ্টা করেন। শুক্রবার এন্ডোস্কপি সম্পন্ন হয়েছে। প্যারামিটারগুলো কিছুটা ওপরে উঠছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ম্যাডামের বড় পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান দুইবার করে হাসপাতালে আসছেন।

তিনিও মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন।’

বিএনপির তরফ থেকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের জন্য কাতার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, মেডিকেল বোর্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অর্থাৎ লন্ডনে নেওয়ার বিষয়ে সায় দিলে আমরা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স চাইব। যে কোনো মুহূর্তে তা সরবরাহ করতে কাতার সরকার প্রস্তুত রয়েছে।

বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা গত শুক্রবার গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড বৃহস্পতিবার তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতেই তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি ঘটে। চিকিৎসকরা বলছেন, গত দুদিনে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, সেসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। শুক্রবার দুই দফা মেডিকেল বোর্ড বৈঠক করেছে। প্রতিদিনই খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার নিয়মিত প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

গতকাল বিকেলে এভারকেয়ার হাসপাতালের বাইরে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে ব্রিফ করেন মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, শুক্রবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কারিগরি ত্রুটির কারণে আসতে পারেনি, এটাও যেমন সত্য কথা; ওই সময়ে জরুরিভাবে মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, ওই মুহূর্তে উনার ফ্লাই করা সঠিক হবে না। সেজন্য উনাকে বিদেশ নেওয়ার বিষয়টি কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হয়তো শারীরিক অবস্থাই বলে দেবে উনাকে (খালেদা জিয়া) কখন বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া যাবে অথবা নিয়ে যাওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, এখন এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সবসময় প্রস্তুত আছে; কিন্তু প্রস্তুত থাকলেও বেগম জিয়ার সুচিকিৎসা এবং সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি প্রাধান্য পাচ্ছে। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা এবং যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন থেকে আসা চিকিৎসকরা সমন্বিতভাবে বেগম জিয়ার চিকিৎসায় অংশ নিচ্ছেন। সবাই উনার ফিজিক্যাল কন্ডিশনের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

অধ্যাপক জাহিদ বলেন, মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ছয় বছর ধরে উনাকে বিভিন্ন সময়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও যে সেবা দিয়ে আসছেন, আজ হয়তো পরিস্থিতি কিছু বদলেছে। আপনারা সবাই সাক্ষী, কী অবস্থার মধ্য দিয়ে আমাদের বিগত ছয়টি বছর পার করতে হয়েছে। এ অবস্থার মধ্যে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে এবং অত্যন্ত প্রফেশনালি বিষয়টি হ্যান্ডলিং করেছেন।

খালেদা জিয়া যখনই শারীরিকভাবে সক্ষম হবেন, তখনই ফ্লাই করবেন জানিয়ে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। যখনই উনাকে বিদেশ নেওয়ার জন্য মেডিকেল বোর্ড যথোপযুক্তভাবে তৈরি মনে করবেন, শারীরিকভাবে মনে হবে যে উনাকে সেফলি ট্রান্সফার করা যাবে, তখন তিনি যাবেন। ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা যখন বিমানে ফ্লাই করবেন, তখন হাই অল্টিচুডে মানুষের শারীরিক যে পরিবর্তন হয়, সেটির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো একজন অসুস্থ মানুষের পক্ষে সবসময় সম্ভব হয় না—এই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হয়। আপনারা দয়া করে বিভ্রান্ত হবেন না, দয়া করে কেউ বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করবেন না।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে কাতার সরকার এবং আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সর্বোচ্চ পর্যায়ে সহযোগিতা করছে এবং তারা উনাকে বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন।

গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে সেখানে ভর্তি করা হয়। গত রোববার ভোরের দিকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। এভারকেয়ার হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। এ চিকিৎসকরা গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার সর্বশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করে বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন। সে হিসেবে গত শুক্রবার তাকে বিদেশে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে বিএনপি জানায়, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কারিগরি ত্রুটি এবং খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ফ্লাই করার মতো ফিট না হওয়ায় তাকে লন্ডনে নেওয়া বিলম্বিত হচ্ছে।

Side banner
Side banner
Link copied!